39272

প্রথম পররাষ্ট্রনীতি ভাষণে যা স্পষ্ট করলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ব্রিটেন ও কনজারভেটিভ পার্টির জন্য একটি নতুন ও স্থিতিশীল পর্বের সূচনা করার প্রত্যাশায় গত মাসে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। এমন সময় তিনি ব্রেক্সিট পরবর্তী ব্রিটেনকে প্রস্তুত করার দায়িত্ব নিয়েছেন যখন ইউরোপীয় মহাদেশে একটি যুদ্ধ চলমান এবং নতুন ভূ-রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ সামনে এসেছে। সোমবার সন্ধ্যায় তিনি তার প্রথম পররাষ্ট্রনীতি ভাষণ দিয়েছেন। দুটি নির্দিষ্ট কারণে এই ভাষণ ছিল গুরুত্বপূর্ণ।

প্রথমত, ঋষি সুনাকের কোনও ডি ফ্যাক্টো পররাষ্ট্রনীতি নেই। যদিও তিনি স্পষ্ট করেছেন যে, তিনি ইউরোপীয় দায় এবং উদার মূল্যবোধের সুরক্ষায় অবস্থান নেবেন। তিনি নিজের পররাষ্ট্রনীতির জন্য একটি সুসংগত এবং সুনির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গির রূপরেখা ছাড়াই তা তা বলেছেন।

ads

ইউনিভার্সিটি অব লিডস-এর ব্রিটিশ রাজনীতি-বিষয়ক সহযোগী অধ্যাপক ভিক্টোরিয়া হানিম্যান বলেন, ধারণা ছিল তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের পরররাষ্ট্রনীতির কাছাকাছি থাকবেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর দেশটির সমর্থনে খুব সক্রিয় ছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য বিশেষ সম্পর্কের সমর্থক এবং যুক্তরাজ্যে চীনের প্রভাব নিয়ে সতর্ক।

তিনি আরও বলেন, এর বাইরে কিছু বলা মুশকিল। অবশ্য সুনাকে জাতিগত পরিচয় এবং ভারতে তার স্ত্রীর পরিবার ও বাণিজ্যিক স্বার্থ থাকায় নয়াদিল্লির সঙ্গে ভালো সম্পর্কের প্রত্যাশা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।

ads

দ্বিতীয়ত, সাবেক দুই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জনসন ও লিজ ট্রাস প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। আর্থিক বাজার ছাড়া আন্তর্জাতিক ভূরাজনৈতিক মঞ্চে সুনাকের কোনও প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা ছিল না। এই অভিজ্ঞতার ঘাটতি একটি সুবিধা এনে দিতে পারে।

কুইন ম্যারি ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের ব্রিটিশ রাজনীতি ও পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক সিনিয়র লেকচারার জেমস স্টং বলেন, পররাষ্ট্রনীতির দৃষ্টিভঙ্গির নিরিখে অজ্ঞাত থাকার ফলে তিনি কম আদর্শিক এবং আরও বাস্তববাদী হতে পারেন। রাজনীতিতে প্রবেশের আগে কোষাগারের চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করার ফলে আমরা আশা করতে পারি তিনি নিরাপত্তা বা রাজনৈতিক বিষয়ের চেয়ে অর্থনীতিতে গুরুত্বারোপ করবেন।

সুনাক তার ভাষণে স্পষ্ট করেছেন উদারনৈতিক মূল্যবোধ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তিনি অদূর ভবিষ্যতে ব্রিটেনের প্রভাব বিস্তৃত করার কথাও বলেছেন।

সুনাক বলেন, স্বাধীনতা ও উন্মুক্ততা সব সময় সমৃদ্ধির শক্তি ছিল। কিন্তু এটি কখনও স্থির থেকে অর্জিত হয়নি। ব্রিটেনকে অবশ্যই বিশ্ব মঞ্চে নিজেদের স্বাধীনতা ও উন্মুক্ততা রক্ষায় আরও বেশি উদ্যোগী হতে হবে।

ব্রিটেনের জন্য নিজের পররাষ্ট্রনীতিকে দৃঢ় বাস্তববাদ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। যা গত সপ্তাহে ইউক্রেন সফরের সময় ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সামনে তুলে ধরেছেন। ক্ষমতায় পরিবর্তন হলেও ইউক্রেনের প্রতি ব্রিটেনের অঙ্গীকার অটুট থাকার ইঙ্গিত দেয় ওই সফর। সুনাকের ভাষণে আবারও তা স্পষ্ট হয়েছে।

সুনাক বলেছেন, রুশ গ্যাস দিয়ে শুরু করে স্বৈরাচারী শাসকদের ওপর যুক্তরাজ্যকে অবশ্যই বৈশ্বিক নির্ভরতা কমাতে হবে।

ভাষণে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইঙ্গিত দিয়েছেন ভবিষ্যতে চীনের কেমন সম্পর্ক তিনি চান। ব্রিটেনের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক অবনতি হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামরনের সময়ে।

সোমবার সুনাক জোর দিয়েছেন চীনের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহের বিষয়ে। তিনি বলেছেন, বিশ্ব পরিক্রমা থেকে ইচ্ছা করলেই চীনকে অস্বীকার করতে পারে না ব্রিটেন। এর মধ্যে রয়েছে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা থেকে জলবায়ু পরিবর্তনের মতো ইস্যু।

সূত্র: আল জাজিরা

ad

পাঠকের মতামত