22891

সীমান্তবর্তী ৭ জেলা লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেবেন ডিসিরা

ডেস্ক নিউজ: করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকা সীমান্তবর্তী ৭ জেলায় লকডাউনের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক (ডিসি) সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। পাশাপাশি তিনি বলেন, ভারত থেকে আসা ব্যক্তিদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকের ব্রিফিংয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার ভার্চুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রীরা বৈঠকে যুক্ত হন। এদিকে মন্ত্রিসভা বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সকলকে মাস্ক পরাসহ সচেতন করার জন্য তৎপর হতে বলেছেন। একই সঙ্গে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সাতক্ষীরা ও অন্যান্য আম মৌসুম এলাকায় লকডাউন সঠিকভাবে পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। তবে ওইসব এলাকার মৌসুমি ফল বিক্রেতাদের যেন ব্যবসায়িক ক্ষতি না হয়, সেদিকে নজর রাখার জন্য স্বাস্থ্য সচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন।

সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে লকডাউনের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কাছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চিঠি পাঠিয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, চিঠিটা এখনও পাইনি। ইতোমধ্যে ডেপুটি কমিশনার (ডিসি), সিভিল সার্জন, চেয়ারম্যান বা মেয়র; ওনাদের বলেই দেয়া আছে, যদি আপনারা মনে করেন কোন জায়গা করোনা সংক্রমণের ক্ষতিকর মাত্রা হয়, সেক্ষেত্রে আপনাদের অবস্থা অনুযায়ী এটা (লকডাউন) করে দিতে পারবেন।

ads

তিনি বলেন, ইচ্ছা করলে স্থানীয় জেলা প্রশাসন লকডাউন ঘোষণা করতে পারবে- তাদের আগেই বলে দেয়া হয়েছে। যেমন- চাঁপাইনবাবগঞ্জ, এটা কিন্তু ওখান থেকেই পরামর্শ এসেছে। আমরা অন্য জেলা প্রশাসনকে বলে দিয়েছি, যদি মনে করে পুরো জেলা না করে ওই সীমান্ত এলাকা লকডাউন করতে হবে, সেটাও বলে দেয়া হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, পাশাপাশি এতদিন ধরে লকডাউন, উত্তরবঙ্গে এখন আমের মৌসুম। এই সময়ে যদি পুরোপুরি লকডাউন হয় তখন কী হবে। এগুলো বিবেচনায় আছে। তবে যদি ঝুঁকিপূর্ণ মনে করি তাহলে সেটা অবশ্যই করব। মন্ত্রিসভার কোন সিদ্ধান্ত আছে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মন্ত্রিসভা বৈঠকে বলেছে, একটা লকডাউন চলছে, আর যদি কোন লোকাল জায়গায় কোনরকম মনে হয়। যেমন- গত বছরও আমরা কোন কোন জায়গায় (লকডাউন) করেছি।

ads

কিছু জেলায় অক্সিজেন সঙ্কট রয়েছে- এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ইতোমধ্যে গত পরশু স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যে, জেলাগুলোয় যেন তাড়াতাড়ি অক্সিজেনের ব্যবস্থা করেন। আইসিইউ বা হাইফ্লো অক্সিজেন কীভাবে করা যায়, অথবা মেডিক্যাল কলেজগুলোতে সিরিয়াস পেসেন্টগুলোকে আগে শিফট করার চেষ্টা করেন। আর ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট হলে তাহলে তাদেরকে পৃথক করে রাখার জন্য চেষ্টা করেন।

আরেকটা বিষয় আছে। এটা বারবার অনুরোধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী এবং পুরো ক্যাবিনেট। আপনারা বারবার অনুরোধ করছেন কিন্তু তারপরও দেখা যায় অনেক লোক মাস্ক পরে না। এটা তো আমাদের সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে। কারণ আমরা বারবার বলছি, এটা সামাজিক ব্যধি। আমাদের সবাইকে যার যার জায়গা থেকে আরও সতর্ক হওয়ার সুযোগ আছে। আমরা যদি সবাই মাস্ক ব্যবহার করি, নিশ্চিতভাবে এটা কমে যাবে। সেজন্য আপনারা (গণমাধ্যম) সবাইকে বলবেন, যে যেখানে আছে মাস্কটা যেন ব্যবহার করি, স্যানিটাইজার যেন ব্যবহার করি।

কোয়ারেন্টাইনে থাকায় সাকিব ও মুস্তাফিজকে ধন্যবাদ ॥ খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, যথাসম্ভব বিয়ে বা এ জাতীয় অনুষ্ঠান যেমন বন্ধ আছে, আমরা নিজেরাও যেন এ বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেই। এর মধ্যে আমার কয়েকটা নলেজে এসেছে- মসজিদে গিয়ে ৪-৫ ব্যক্তি, তারপরে মেয়ের বাসায় গিয়ে বিয়ে পড়িয়ে বউ নিয়ে এসেছে। আমরা ধন্যবাদ জানাই, যারা এ কাজগুলো করছেন তাদের।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ভারত থেকে যারা আসছেন তারা সবাই ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকছেন। এটা থাকতে হবে। ইভেন আমাদের দুজন খেলোয়াড় ছিল- সাকিব (ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান) এবং মুস্তাফিজ (ক্রিকেটার মুস্তাফিজুর রহমান)। তারা প্র্যাকটিসে গেছেন, ক্রিকেট বোর্ড বলার পর আমরা সাকিব এবং মুস্তাফিজকে বোঝালাম- তোমরা তো আমাদের সবার আদর্শ। তোমরা যদি মানো তাহলে সবার জন্য সুবিধা। তারা ভাল সহযোগিতা করেছেন। এজন্য আমরা ধন্যবাদ জানাই- সাকিব এবং মুস্তাফিজকে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, যাদের শরীরে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যাচ্ছে, তাদের আলাদা করে রাখার জন্য বলা হয়েছে। আর যারা সে দেশ থেকে আসছেন তাদের মাস্ট ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইন করতে হচ্ছে। ক্রিকেটার সাকিব ও মুস্তাফিজকেও কোয়ারেন্টাইন করতে হয়েছে। তারা আমাদের সহযোগিতা করেছেন। কারও ক্ষেত্রে ছাড় দেয়া হচ্ছে না।

এনআইডি কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্তের বিষয় ॥ জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) কার্যক্রমটা নির্বাচন কমিশন থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দেয়া হচ্ছে। সেটা নিয়ে সিইসি এবং অন্যরা প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে- এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটা তো অনেক আগের সিদ্ধান্ত। আমাদের কাছে সিদ্ধান্তটা জানিয়ে দেয়া হয়েছে। আমরা এ্যালোকেশন অব বিজনেস দেখছি। পুরোপুরির জন্য আমরা আবার মিটিং করব। এতে জনগণের হয়রানি বাড়বে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তখন আমি ছিলাম না। আমি আসার আগে সিদ্ধান্ত হয়েছে। জিনিসটা আবার একটু দেখে, যখন বসব তখন বলব।

সাতক্ষীরা লকডাউনের সিদ্ধান্ত ৩ জুন ॥ স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা থেকে জানান, করোনা রেড এলার্টের আওতায় থাকা সাতক্ষীরায় এখনই লকডাউন না দেয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে কড়া বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে স্থানীয়ভাবে প্রতিরক্ষা কমিটি গঠন করা হয়েছে। করোনা প্রতিরোধে সাতক্ষীরায় লকডাউন হবে কি হবে না, আগামী ৩ জুন মিটিংয়ে সে সম্পর্কে জেলা পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল। সোমবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে করোনা বিষয়ক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

জেলা প্রশাসক জানান, করোনা সংক্রমণ রোধে জেলায় বেশকিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরা সদর আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি, সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান, সিভিল সার্জন ডাঃ হুসাইন শাফায়াত, বিজিবি ৩৩ ব্যাটালিয়নের উপপরিচালকসহ কর্মকর্তাবৃন্দ।

সোমবারের সভায় সাতক্ষীরা সীমান্তের চোরাপথ দিয়ে অবৈধ লোকজনের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এজন্য সীমান্তবর্তী উপজেলা সাতক্ষীরা সদর, কলারোয়া, কালীগঞ্জ, দেবহাটা এবং শ্যামনগরের কৈখালি ইউনিয়ন সংলগ্ন সীমান্ত পাহারায় স্থানীয়ভাবে প্রতিরক্ষা কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিতে থাকছেন উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও, বিজিবি প্রতিনিধি এবং স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানবৃন্দ। প্রতিরক্ষা কমিটি সীমান্তের চোরাচালানী, মানুষ পাচারকারী এবং অবৈধ যাতায়াতকারীদের চিহ্নিত করবে। একইসঙ্গে তাদের বাড়িঘর এবং চলাফেরার ওপর কড়া নজরদারি রাখা হবে।

বৈঠকে জানানো হয়, সাতক্ষীরা জেলা করোনা রেড এলার্টের আওতায় রয়েছে। এছাড়া সীমান্ত গলিয়ে লোকজনের অবৈধ পারাপার রোধ করতে বিজিবি মাঠে রয়েছে। ভোমরা বন্দর দিয়ে প্রতিদিন আসা ৩০০ পণ্যবাহী গাড়ির পাঁচ শতাধিক চালক ও হেল্পার যাতে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াতে না পারে সে বিষয়েও বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে।

এদিকে করোনা সংক্রমণ রোধে প্রত্যেককে মাস্ক ব্যবহার করে স্বাস্থ্যবিধি মানার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই নির্দেশ লঙ্ঘন করলে ভ্রাম্যমাণ আদালত তাকে এক হাজার টাকা জরিমানা করতে পারবে। বর্তমানে সাতক্ষীরায় করোনা সংক্রমণের হার কত তা নিশ্চিত করে আগামী ৩ জুন সাতক্ষীরা জেলায় লকডাউনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

ad

পাঠকের মতামত